তরুণ উদ্যোক্তা এহসানুল হাবিব এসকোয়্যার নিট কম্পোজিট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কোম্পানিটি দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসেন তিনি। যোগ দেন পারিবারিক ব্যবসা এসকোয়্যার গ্রুপে। গ্রুপের টেক্সটাইল ব্যবসার সবকিছু তিনিই দেখভাল করছেন। টেক্সটাইল খাতের নিত্যনতুন প্রযুক্তি ও টেকনিক্যাল নো হাউ সম্পর্কে তিনি নিয়মিতই খোঁজখবর রাখেন। এশিয়া, ইউরোপ, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস সম্পর্কিত বিভিন্ন সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও মেলায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন। বণিক বার্তার সঙ্গে আলাপচারিতায় সম্প্রতি নিজের প্রতিষ্ঠান এবং দেশের টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস শিল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেহেদী হাসান রাহাত
এহসানুল হাবিব
ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসকোয়্যার নিট কম্পোজিট লিমিটেড
আপনার ক্যারিয়ার সম্পর্কে জানাবেন…
আমি পড়াশোনা করেছি ধানমন্ডি গভ. বয়েজ স্কুলে। তারপর নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছি। পরবর্তী সময়ে আমি দেশের বাইরে চলে যাই। যুক্তরাষ্ট্রের পেস ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসি। আমি বর্তমানে এসকোয়্যার গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের দায়িত্বে রয়েছি। এটা আমাদের পারিবারিক ব্যবসা। আমাদের ব্যবসার শুরু এসকোয়্যার ইলেকট্রনিকসের মাধ্যমে। এসকোয়্যার গ্রুপে আমার ক্যারিয়ার শুরু ১৯৯৩ সালে। বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে যখন দেশে আসি, তখন আমাদের ইয়ার্ন ডায়িং প্রজেক্টটি চালু হয় এবং আমি এর দায়িত্ব নিই। পরবর্তী সময়ে আমরা টেক্সটাইলের অন্যান্য ইউনিট যেমন— ফ্যাব্রিক ডায়িং, গার্মেন্টস এগুলো চালু করি। ২০০০ সালে এসে আমরা একটি কমপ্লিট নিট ডায়িং প্রজেক্ট শুরু করি। এ প্রজেক্ট থেকে আমরা রফতানি শুরু করি ২০০১ সালে। প্রথমে আমরা স্বল্প পরিসরে শুরু করলেও বর্তমানে এর পরিসর বেড়েছে। এ বছর আমরা সাড়ে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি রফতানি করতে পারব বলে আশা করছি।
টেক্সটাইল ব্যবসায় আসার কারণ কী ছিল?
এসকোয়্যার গ্রুপের মূল উদ্যোক্তা আমার বাবা। তার ট্রেডিং ব্যবসার বাইরেও অন্য খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণে ইচ্ছা ছিল। তিনি টেক্সটাইল খাতের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা অনুধাবন করতে পেরে এ খাতের ব্যবসায় যুক্ত হন। তাছাড়া আমরা যখন টেক্সটাইল খাতের ব্যবসায় আসি, তখন সরকারেরও অনেক প্রণোদনা ছিল। সত্যি কথা বলতে কী, সরকারের প্রণোদনা ছাড়া আসলে এতদূর পর্যন্ত আসা সম্ভব হতো না।
যখন শুরু করেছিলেন সেসময়ের তুলনায় বর্তমানে টেক্সটাইল খাতে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে?
গত আড়াই দশকে টেক্সটাইল খাতের ব্যবসায় একেবারে ৩৬০ ডিগ্রি রূপান্তর ঘটেছে। আমরা যখন শুরু করি তখন একেবারে বেসিক টাইপের পণ্য যেমন— গোল গলার গেঞ্জি, স্যান্ডো গেঞ্জি এগুলো উৎপাদন হতো। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দক্ষতা বেড়েছে। জনবলও সমৃদ্ধ হয়েছে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারও আগের তুলনায় অনেক বেশি পারদর্শী হয়েছে। এখন আমরা স্পোর্টসওয়্যার, জগিং সেট এগুলো উৎপাদন করছি। আমরা বেসিক থেকে সেমি-বেসিক কিছুটা ফেন্সি টাইপের পণ্যের দিকে ঝুঁকছি। আগে আমরা যেসব ফ্যাব্রিক আমদানি করতাম, সেগুলো এখন আমরা নিজেরাই তৈরি করছি। একসময় আমরা ক্রেতাদের সরবরাহ করা ডিজাইন অনুসারে পণ্য উৎপাদন করলেও এখন নিজেদের ডিজাইন করা পণ্য রফতানি করছি।
তাছাড়া অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের এখানে লোকবলের সহজপ্রাপ্যতাও এ খাতের বিকাশে ভূমিকা রাখছে।
তার মানে টেক্সটাইল খাতের বিকাশে সস্তা শ্রমের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ?
দেখুন, এ বিষয়ে আমার একটু দ্বিমত রয়েছে। এন্ট্রি লেভেলের শ্রমিকদের ক্ষেত্রে সস্তা শ্রমের বিষয়টি ঠিক আছে। কিন্তু যারা দক্ষ তাদের ক্ষেত্রে কিন্তু অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের তুলনায় খুব একটা কম পারিশ্রমিক দেয়া হয় না। অথচ আমাদের দেশের শ্রমিকদের তুলনায় অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের দক্ষতা অনেক বেশি। যেমন একজন চাইনিজ শ্রমিক প্রতিদিন যে পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করতে পারে, আমাদের শ্রমিকরা কিন্তু এখনো সেভাবে পারদর্শী হয়ে উঠতে পারেনি। ফলে তাদের যে পারিশ্রমিক দেয়া হয়, সে তুলনায় প্রতিষ্ঠান তাদের কাছ থেকে কম রিটার্ন পাচ্ছে। আরেকটি বিষয় সস্তা শ্রমের বিষয়টি এতটাই আলোচিত হয়েছে যে, এটি এখন আমাদের ব্র্যান্ডিং হয়ে গেছে। বাংলাদেশে যখনই কোনো বিদেশী ক্রেতা আসে দেখা যায় যে, তারা একই জিনিস যেটি চীন থেকে ৫ ডলারে কিনছে কিন্তু আমাদের ৩ ডলারের বেশি দিতে রাজি নয়। অথচ আমাদের পণ্যের মান আর তাদেরটার মধ্যে কোনো তফাত নেই। আপনি যদি বিদেশে যান সেখানে দেখবেন জারা, এইচঅ্যান্ডএম সিঅ্যান্ডএর মতো বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোয় ভিয়েতনাম কিংবা চীনের পণ্যের মান আর বাংলাদেশের পণ্যের মান একই। অথচ বিদেশী ক্রেতারা একই পণ্য চাই না কিংবা ভিয়েতনাম থেকে বেশি দামে কিনলেও বাংলাদেশ থেকে এর চেয়ে কম দামে কিনছে। এতে কিন্তু আসলে আমরা কোনো সুবিধা পাচ্ছি না। লাভ হচ্ছে মূলত বিদেশী ক্রেতাদের। এর বিপরীতে পণ্য উৎপাদনের খরচসহ বিভিন্ন ধরনের কমপ্লায়েন্স পরিপালন করতে গিয়ে আমাদের ব্যয় কিন্তু আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। পণ্যের দাম কিন্তু সেভাবে বাড়ছে না। তাই আমি মনে করি, সস্তা শ্রমের দেশ হিসেবে ব্র্যান্ডিং করে নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল না মারা ভালো।
আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ফ্যাসিলিটি বাড়ছে। বিষয়টি উৎপাদন ব্যয় কমাতে কতটুকু ভূমিকা রাখছে?
ব্যয় কমাতে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ফ্যাসিলিটির অবশ্যই ভূমিকা রয়েছে। যেসব কাঁচামাল আমদানি করতে খরচ বেশি পড়ে সেগুলো স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করাই লাভজনক। কিন্তু আমাদের এখানে সুদের হার এখনো অনেক বেশি। ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ পেতে এখনো আমাদের দুই অংকের সুদ গুনতে হয়। এতে ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। অথচ প্রতিযোগী দেশগুলোয় কিন্তু সুদের হার আমাদের তুলনায় অনেক কম। এক্ষেত্রে আমরা কিন্তু তাদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছি। এ কারণে আমরা বিদেশী ঋণের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। এতে আমাদের সুদ বাবদ ব্যয় অনেক কম হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এতে বিদেশী ঋণ পরিশোধে আপনাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হবে কি না?
যেহেতু আমরা শতভাগ রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠান তাই আমাদের আয়টাও আসে ডলারে। ফলে ডলারের দাম বাড়লেও ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে আমাদের সমস্যা হবে না। কারণ ডলারের দাম বাড়লে আমরা বাংলাদেশী টাকায় পণ্যের দামও বেশি পাব।
ব্যবসা করতে গিয়ে আপনাদের কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে?
দেখুন, আমাদের এখানে এখনো কিন্তু পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সময় লাগে। ফলে সময়মতো পণ্য ডেলিভারি করাটা কষ্টকর হয়ে পড়ে। এতে ব্যয়ও বেড়ে যায়। পোর্টে আমদানি করা কাঁচামাল খালাস করতে এবং উৎপাদিত পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে তুলনামূলক সময় বেশি লাগছে। তার ওপর গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট তো রয়েছেই। ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য চাইলেই আমরা পর্যাপ্ত গ্যাস-বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। এতে আমরা প্রতিযোগিতায় অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছি। কিছুদিন আগে পত্রিকার নিউজে দেখেছি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের গুজরাটে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাতের ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছ থেকে আমাদের তুলনায় অনেক বেশি প্রণোদনা পাচ্ছে। এতে তাদের উৎপাদন ব্যয় আমাদের তুলনায় অনেক কম পড়ছে। তাছাড়া ভারত কিন্তু নিজেদের উৎপাদিত তুলা থেকে সুতা উৎপাদন করছে, যেটি আমাদের নেই। ফলে তাদের জিএসপি সুবিধা না থাকলেও তারা আমাদের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য রফতানির মাধ্যমে বাজার দখল করছে। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে আমাদের তুলনায় ভারতেই রফতানি প্রবৃদ্ধির হার বেশি। যদিও আমাদের শ্রমিকদের দক্ষতা ও পণ্যের গুণগত মানের কারণে আমরা এখনো এগিয়ে আছি, তবে তারাও কিন্তু এগিয়ে আসছে। এটি আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের রফতানি আয়ের সিংহভাগই কিন্তু টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাতের অবদান। তাছাড়া একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবিকা নির্ভর করছে এ খাতের ওপর। বিপরীতে এর বিকল্প কোনো খাত কিন্তু গড়ে উঠছে না। চামড়া খাতের সম্ভাবনা থাকলেও কয়েক বছর ধরে এর রফতানি আয় কমছে। তাই যদি দেশের টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাতে সমস্যা হয়, তাহলে কিন্তু অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সরকার আমাদের সবসময়ই সহযোগিতা করেছে। তবে আমরা সরকারের কাছ থেকে আরো বেশি প্রণোদনা প্রত্যাশা করছি।
চীনে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার ব্যবসার বড় একটি অংশ বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল…
আমরাও তাই ভেবেছিলাম। কিন্তু আসলে সেভাবে চীনের ব্যবসা আমাদের এখানে আসেনি। এর একটা কারণ হচ্ছে, ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক উদ্যোক্তা চীন থেকে তাদের কারখানা ভিয়েতনামসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় স্থানান্তরের মাধ্যমে উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। সামান্য অংশ বাংলাদেশে এসেছে।
আবার এ বছর আমরা চীনেও আমাদের পণ্য রফতানি শুরু করেছি। তবে বিদেশী ক্রেতারা বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের কারণে বর্তমানে কিছুটা রক্ষণাত্মক অবস্থানে রয়েছে। যদিও আমরা সেভাবে কোনো ঝুঁকি দেখছি না।
আপনারা ব্যবসা সম্প্রসারণে আইপিও তে আসছেন…
আইপিওর মাধ্যমে আমরা যে প্রকল্পটি করছি সেখানে আমাদের হাই এন্ডের পণ্য উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে আমরা একটি অত্যাধুনিক লঞ্জারি ও স্পোর্টস ওয়্যার প্রকল্প করব। এতে ৫৭৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। আইপিওর পাশাপাশি আইএফসি থেকে ঋণ ও নিজেদের অর্থায়নে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আইপিওর টাকা সংগ্রহের আগেই আমরা প্রকল্পের কাজ শুরু করে দিয়েছি। এমনকি পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে আমরা গত মাস থেকেই রফতানি শুরু করেছি। মূলত বিদেশী ক্রেতাদের কাছে আমাদের পণ্য সম্পর্কে জানাতে আমরা রফতানি শুরু করেছি। তাছাড়া প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবলও নিয়োগ দেয়া হয়ে গেছে। আশা করছি, আগামী দুই বছরের মধ্যেই এ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়ে যাবে। আগামী বছরে আমাদের ৯০ মিলিয়ন ডলার রফতানি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে আইপিও প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ১২০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি পণ্য রফতানি করা সম্ভব হবে। আইপিও প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার পর আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করব। মূলত দ্বিতীয় পর্যায়ে আমরা এ প্রকল্পের টেক্সটাইল সেকশনটা করব। অর্থাৎ গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে আমরা যে ফ্যাব্রিকটা ব্যবহার করব, সেটা আমরা নিজেরাই উৎপাদন করব।
বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে ইলেকট্রনিক বিডিংয়ে আপনারা যে প্রাইস পেয়েছেন তাতে কি সন্তুষ্ট?
হ্যাঁ, আমরা এনএভির কাছাকাছি প্রাইস পেয়েছি এবং তাতে আমরা সন্তুষ্ট। তাছাড়া সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন শুরুর পর আমাদের পারফর্ম্যান্সের কারণে শেয়ারহোল্ডাররা এ শেয়ারের যৌক্তিক মূল্যায়ন করবেন বলে আমার বিশ্বাস।
কারখানার শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে আপনারা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
আমাদের বিদ্যমান কারখানায় শ্রমিকদের বিনামূল্যে দুপুরের খাবার সরবরাহ করছি। তাছাড়া তাদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। আর নতুন যে প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি, তাতে শ্রমিকদের জন্য আরো বেশি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রকল্পের পাশেই শ্রমিক থাকার জন্য ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া শ্রমিকদের স্বার্থে এখানে ডে কেয়ার সেন্টার, স্কুল, হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। আমার কারখানার শ্রমিকরা ভালো থাকলে তাদের উৎপাদনসক্ষমতা ঠিক থাকবে, তাই তাদের স্বার্থটাই আমার কাছে মুখ্য।
সম্প্রতি গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।
এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এতে আমাদের ব্যয় অনেক বাড়বে। গত বছরের চেয়ে এ বছর পণ্য উৎপাদনে আমাদের ব্যয় বেড়েছে। এর বিপরীতে আমাদের পণ্যের দাম প্রায় ৭ শতাংশের মতো কমে গেছে।
পণ্যের দাম কমে যাওয়ার কারণ কী?
এর কারণ হচ্ছে আমরা বিদেশী ক্রেতাদের কাছে পণ্যের যে দাম চাই অনেক সময় দেখা যায়, আমাদেরই প্রতিযোগী কোনো স্থানীয় প্রতিষ্ঠান আমাদের চেয়ে কম দাম প্রস্তাব করে সে অর্ডার নিয়ে নিচ্ছে। এতে করে কাজটা পেলেও আমাদের পণ্যের দামটা কিন্তু কমে যাচ্ছে। আমি মনে করি, এক্ষেত্রে বিজিএমইএ ও সরকারের একটা ভূমিকা থাকা উচিত। যাতে করে পণ্যের দামের ক্ষেত্রে একটি ন্যূনতম সীমা বলবৎ থাকে। অর্ডার পাওয়ার জন্য কেউ যাতে এ সীমার নিচে দাম চাইতে না পারে।
দেশের রফতানি আয় শুধু পোশাক খাতেই কেন্দ্রীভূত। কোনো কারণে এ খাতে ধস নামলে অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে?
শুধু একটি খাতের ওপর রফতানি আয় নির্ভর করলে ঝুঁকি থাকবেই। তবে এক্ষেত্রে পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো সম্ভব। যেমন এখন কিন্তু আমরা জ্যাকেট কিংবা স্যুটের মতো পণ্য সেভাবে উৎপাদন করছি না। আমাদের সেদিকে নজর দেয়া উচিত। যাতে কোনো কারণে বর্তমানে উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা কমে গেলে আমরা বিকল্প পণ্যের মাধ্যমে সেই স্থান পূরণ করতে পারি। ক্রেতাদের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে। তাছাড়া দেশের চামড়া খাতের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা যদি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে চামড়া উৎপাদন করতে পারি, তাহলে এ খাত থেকেও ভবিষ্যতে ভালো রফতানি আয় আসবে বলে আমি মনে করি।
মানবসম্পদের দক্ষতা বাড়িয়ে তাদের কেন্দ্র করে আমাদের রফতানি পরিকল্পনা জোরদার করতে পারলে অর্থনীতি অনেক দূর এগিয়ে যাবে। তথ্যপ্রযুক্তি হতে পারে এর মূল হাতিয়ার।
রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর গঠিত অ্যাকর্ড–অ্যালায়েন্সের শর্ত অনুসারে দেশের গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল খাতে কারখানা গুলোকে অনেক কমপ্লায়েন্সের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এক্ষেত্রে এসকোয়্যারের অবস্থান কী?
রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনার কারণে সবার মধ্যেই সচেতনতা বেড়েছে। অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের নির্দেশনা অনুসারে দেশের কারখানাগুলোয় কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অন্য ভালো কোম্পানিগুলোর মতো এসকোয়্যারও সেভাবে তৈরি হয়েছে।
তবে এতে কিন্তু উদ্যোক্তাদের অনেক অর্থ ব্যয় হয়েছে। অথচ বিদেশী ক্রেতারা মুখে কমপ্লায়েন্সের কথা বললেও পণ্যের দাম বাড়াতে চায় না। আমরা তাদের বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেভাবে সাকসেসফুল হতে পারিনি। এখন দেখা যাক, ভবিষ্যতে এ থেকে কোনো সুবিধা নেয়া যায় কিনা?
দেশের গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল খাতে অনেক বিদেশী কর্মী কাজ করছেন। এতে দেশ থেকে মূল্যবান বিদেশী মুদ্রা বাইরে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় কর্মীদের দক্ষ করে তুলতে আপনারা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
এটা ঠিক, এ খাতে অনেক বিদেশী নাগরিক কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনেই বিদেশীদের কাজ দিতে হয়েছে। তবে আমাদের স্থানীয় কর্মীরা কিন্তু ধীরে ধীরে দক্ষ হয়ে উঠছেন। তারা বিদেশী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কাজ শিখে নিচ্ছেন। আশা করছি একসময় আমাদের স্থানীয় প্রফেশনালরাই কারখানা চালাতে পারবেন। আর আমি নিজেও একজন বাঙালি। তাই আমার দেশী ভাইদের দিয়ে যদি কাজ চালাতে পারি, তাহলে একটা বিদেশীও আমাদের কোম্পানিতে থাকবেন না।
এসকোয়্যার নিট কম্পোজিটে শেয়ারহোল্ডাররা কেন বিনিয়োগ করবেন?
আপনি যদি আমাদের কোম্পানির প্রবৃদ্ধি দেখেন তাহলে দেখবেন আমরা একটা ধারাবাহিক পারফর্ম্যান্সের মধ্যে আছি। শুরু থেকেই আমরা মুনাফা করছি। আমাদের পণ্যের চাহিদা ভালো। আমরা দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যবসা করছি। আমি শেয়ারহোল্ডারদের বলব তারা যেন কোম্পানির সম্ভাবনা, ট্রেন্ড, পূর্ববর্তী ইতিহাস, পারফর্ম্যান্স, উদ্যোক্তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে যাতে বিনিয়োগ করেন তাহলে তাদের বিনিয়োগ নিরাপদ থাকবে এবং তারা ভালো রিটার্ন পারেন। এতে ইন্ডাস্ট্রিও ভালো থাকবে এবং পুঁজিবাজারেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আপনাদের শুরু ইলেকট্রনিকসের ব্যবসা দিয়ে। এটিকে সম্প্রসারণের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না?
আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, আমরা দেশে ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদনের জন্য কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। এজন্য এরই মধ্যে আমরা জাপানের শার্প ও ফুজিত্সু জেনারেলের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। এজন্য জমি নির্বাচন ও শেড নির্মাণ করা হয়ে গেছে। এখন আমরা পরীক্ষামূলক উৎপাদনের জন্য কাজ করছি। এ কারখানায় আমরা মূলত ফ্রিজ ও এসি উৎপাদন করব। আশা করছি, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই এ প্রকল্পে উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে।
এ প্রকল্পটিকে আইপিওতে আনার পরিকল্পনা রয়েছে কি না?
আপাতত এ ধরনের পরিকল্পনা নেই। তবে ভবিষ্যতে আসার প্রয়োজন হতে পারে। তাই তালিকাভুক্তির সম্ভাবনা উড়িয়েও দেয়া যাচ্ছে না।
আপনাকে ধন্যবাদ
বণিক বার্তাকেও ধন্যবাদ